বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নাগরিকদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি। চাকরি, শিক্ষা, ব্যাংকিং, পাসপোর্ট, এমনকি চিকিৎসা সেবাতেও এর প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনেক সময় বয়সে ভুল থাকার কারণে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। জুলাই ২০২৫-এ বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বয়স সংশোধনের নতুন নিয়ম ঘোষণা করেছে। নতুন নিয়মে বয়স পরিবর্তনের জন্য নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।এনআইডি বয়স সংশোধন ২০২৫
১. নতুন নিয়মে বয়স সংশোধনের গুরুত্ব
জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়সের সঠিকতা অত্যন্ত জরুরি। বয়স ভুল থাকলে সরকারি চাকরির বয়সসীমা, পেনশন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, এমনকি বিদেশে ভ্রমণের সময়ও সমস্যা দেখা দিতে পারে। নির্বাচন কমিশনের নতুন নিয়মে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কত বছরের পার্থক্যে কোন ক্যাটাগরিতে পড়বে এবং কী কী ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে।এনআইডি বয়স সংশোধন ২০২৫।
২. বয়স পরিবর্তনের ক্যাটাগরি ও শ্রেণিবিন্যাস
নতুন গেজেট অনুযায়ী বয়স পরিবর্তন ৪টি মূল ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে—
- ১-৩ বছর পরিবর্তন: সাধারণ ক্যাটাগরি
- ৫-৭ বছর পরিবর্তন: “খ” ক্যাটাগরি
- ৮-১০ বছর পরিবর্তন: “গ” ক্যাটাগরি
- ১০ বছরের বেশি পরিবর্তন: “ঘ” ক্যাটাগরি (এক্ষেত্রে মহাপরিচালক, NID উইং-এর অনুমোদন প্রয়োজন)
৩. বয়স সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
বয়স সংশোধনের জন্য ক্যাটাগরি অনুসারে নির্বাচন কমিশন বেশ কিছু প্রমাণপত্র নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে প্রধান হলো—
- শিক্ষাগত সনদপত্র:
- পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স, মাস্টার্স বা সমমানের সনদপত্র।
- শিক্ষাগত সনদপত্রে জন্মতারিখ অবশ্যই পরিষ্কারভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।
- জন্ম নিবন্ধন সনদ (অনলাইন কপি):
- এটি বয়স প্রমাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি।
- চাকরির বই/এমপিও/সুপারিশপত্র (যদি প্রযোজ্য হয়):
- সরকারি বা বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বাধ্যতামূলক।
- পেনশন বই ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার প্রত্যয়নপত্র:
- অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্রযোজ্য।
- ওয়ারিশের NID এবং সম্পর্ক প্রমাণকারী দলিল:
- পরিবারের কারও NID-এর মাধ্যমে সম্পর্ক প্রমাণ করা যেতে পারে।
- পূর্বে ইস্যুকৃত পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স (যদি থাকে):
- জন্মতারিখ প্রমাণে সহায়ক।
- সিভিল সার্জনের রেডিওলজিক্যাল টেস্ট রিপোর্ট:
- বয়স প্রমাণে মেডিকেল টেস্টের রিপোর্ট প্রয়োজন হতে পারে।
- স্বামী/স্ত্রীর NID, সন্তানের NID (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- কাবিননামা, মুক্তিযোদ্ধা সনদ, বা অন্যান্য প্রমাণপত্র
- তদন্ত প্রতিবেদন:
- অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার অফিস থেকে।
৪. কোথায় আবেদন জমা দিতে হবে
- ১-৭ বছরের সংশোধন: জেলা নির্বাচন অফিস
- ৮-১০ বছরের সংশোধন: আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস
- ১০ বছরের বেশি সংশোধন: মহাপরিচালক, NID উইং-এর বিশেষ অনুমোদন প্রয়োজন
৫. নাম পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রক্রিয়া
বয়স পরিবর্তনের পাশাপাশি অনেকেই নাম পরিবর্তনের আবেদন করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের হলফনামা প্রয়োজন হয়। আইনজীবীর মাধ্যমে এই হলফনামা তৈরি করা উত্তম।এনআইডি বয়স সংশোধন ২০২৫।
৬. বিশেষজ্ঞদের মতামত
ঢাকার অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন—
“বয়স সংশোধনের আবেদন করার আগে সঠিক ডকুমেন্ট সংগ্রহ করা জরুরি। ভুল বা অসম্পূর্ণ কাগজপত্রের কারণে আবেদন বাতিল হতে পারে।”
এছাড়া একজন আইনজীবী পরামর্শ দিয়েছেন,
“বয়স পরিবর্তনের জন্য হলফনামা তৈরি করার সময় অবশ্যই অফিসিয়াল স্ট্যাম্প ও সাক্ষীর স্বাক্ষর থাকতে হবে।”
৭. অতীতে বয়স সংশোধনের নিয়ম
আগে বয়স পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তেমন কড়া শ্রেণিবিন্যাস ছিল না। ২-৩টি কাগজপত্র জমা দিলেই সংশোধন হয়ে যেত। তবে এতে অনেক অনিয়ম ঘটত। নতুন নিয়মে গেজেট প্রকাশ করে সঠিক পদ্ধতি নির্ধারণ করায় অনিয়ম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৮. ভবিষ্যতে কী পরিবর্তন আসতে পারে
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে বয়স সংশোধনের জন্য অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া চালু করা হতে পারে। এতে নাগরিকরা বাসা থেকেই আবেদন করতে পারবেন এবং অফিসে গিয়ে কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
উপসংহার
জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স সংশোধন এখন আরও নিয়মতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ হয়েছে। সঠিক কাগজপত্র এবং নির্ধারিত ক্যাটাগরি অনুযায়ী আবেদন করলে দ্রুত সংশোধন পাওয়া সম্ভব। নাগরিকদের উচিত নিয়ম মেনে আবেদন করা এবং ভুয়া তথ্য ব্যবহার না করা।
সূত্র:
- বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল গেজেট, জুলাই ২০২৫
- ঢাকা জেলা নির্বাচন অফিস
ডিসক্লেইমার
এই তথ্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল নোটিশ এবং বিশ্বস্ত সূত্র থেকে সংগৃহীত। নীতিমালা সময়ের সাথে পরিবর্তন হতে পারে, তাই আবেদন করার আগে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট বা স্থানীয় নির্বাচন অফিস থেকে সর্বশেষ তথ্য যাচাই করুন।