২০২৫ সালের জুলাই মাসে নারায়ণগঞ্জে একটি আলোচিত ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ঘুষের অভিযোগে প্রকাশিত এক সংবাদকে কেন্দ্র করে সাংবাদিককে তলব করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এই ঘটনাকে ঘিরে সাংবাদিক মহল এবং সাধারণ মানুষ উভয়েই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।ঘুষের অভিযোগে প্রতিবেদন
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
ঘুষ সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা ট্রিবিউনের রূপগঞ্জ প্রতিনিধি লিখন রাজ-কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে নারায়ণগঞ্জ পিবিআই। ৪ আগস্ট পিবিআই নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল রাশেদ-এর স্বাক্ষরে একটি অফিসিয়াল চিঠি পাঠানো হয়।ঘুষের অভিযোগে প্রতিবেদন
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ অনুসন্ধানের স্বার্থে’ সাংবাদিক লিখন রাজকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। নির্দেশনায় বলা হয়, নোটিশ প্রাপ্তির দুই কর্মদিবসের মধ্যে সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ পিবিআই কার্যালয়ে উপস্থিত হতে হবে। সেখানে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে পরিদর্শক মিন্টু কুমার-এর নাম উল্লেখ করা হয়।
পিবিআই নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল রাশেদ বলেন, “প্রকাশিত প্রতিবেদনে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। আমরা জানতে চাই—সাংবাদিক কীভাবে তথ্য সংগ্রহ করেছেন, সূত্র কী ছিল এবং তা নির্ভরযোগ্য কিনা। এটি কোনও ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য নয়, বরং তথ্য যাচাইয়ের অংশ।”ঘুষের অভিযোগে প্রতিবেদন
পটভূমি ও পূর্ববর্তী ঘটনা
৩ আগস্ট বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, নারায়ণগঞ্জ পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হাফিজুর রহমান একটি মামলার বাদীর কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। এর আগের দিন, ২ আগস্ট, এ সংক্রান্ত একটি ফোনালাপ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। অডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ৩ আগস্ট পিবিআই সদর দপ্তর থেকে হাফিজুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে এই বরখাস্তের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয় ৪ আগস্ট।
সাংবাদিক লিখন রাজের বক্তব্য
লিখন রাজ বলেন, “আমি একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে শুধুমাত্র জনস্বার্থে এবং সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশ করেছি। একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগের ভিত্তিতে রিপোর্টটি করেছি। পিবিআই থেকে আমাকে তলব করার চিঠি দেওয়া হয়েছে, আমি আমার অফিসকে জানিয়েছি। এখন অফিস থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে যেন কেউ অহেতুক হয়রানির শিকার না হয়, সেটি নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।”
বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিক মহলের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনে করেন, এ ধরনের তলব সাংবাদিকদের জন্য চাপ সৃষ্টির কৌশল হতে পারে। তবে আইনজীবীরা বলছেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে তথ্যের উৎস যাচাই একটি আইনসম্মত প্রক্রিয়া।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) এক নেতা বলেন, “যদি সাংবাদিক সত্য ও জনস্বার্থে প্রতিবেদন করেন, তবে তাকে হয়রানি করা গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য হুমকি।”
অতীতে এ ধরনের ঘটনা
বাংলাদেশে এর আগে বহুবার সাংবাদিকরা ঘুষ বা দুর্নীতির খবর প্রকাশের পর হুমকি, চাপ বা আইনি নোটিশের মুখোমুখি হয়েছেন। ২০২৩ সালে চট্টগ্রামে এক সাংবাদিককে একই ধরনের কারণে পুলিশের তলবের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও নজরদারি
আইন ও গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে। যদি বিষয়টি ন্যায়সংগতভাবে সমাধান হয়, তবে এটি সাংবাদিকতা পেশায় আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে।
বর্তমানে সাংবাদিক লিখন রাজের তলব প্রক্রিয়া ও জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে সাংবাদিক মহল, মানবাধিকার সংস্থা এবং সাধারণ মানুষ গভীরভাবে নজর রাখছে।
উপসংহার
ঘুষের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করা সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও সাংবাদিকদের দায়িত্ব হলো সত্য তুলে ধরা। লিখন রাজের এই ঘটনা সাংবাদিকতা ও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে।
সূত্র:
- বাংলা ট্রিবিউন (৩ আগস্ট ২০২৫)
- পিবিআই নারায়ণগঞ্জ অফিসিয়াল নোটিশ (৪ আগস্ট ২০২৫)
- তথ্যসূত্রে কালবেলা–র রিপোর্ট (প্রকাশ: ৮ আগস্ট ২০২৫) যোগ করা হয়েছে
ডিসক্লেইমার
উল্লেখিত তথ্যসমূহ নির্ভরযোগ্য ও যাচাইকৃত সূত্র থেকে সংগৃহীত। সংবাদে কোনও গুজব বা অনুমান ব্যবহার করা হয়নি।